আজ, বুধবার | ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | রাত ২:২১


শেষ বয়সে হেরে গেলেন দরিদ্র পরিবারের মা বাদলি বেগম

আবু বাসার আখন্দ : দরিদ্র পরিবারের বৃদ্ধ মা বাদলি বেগম শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন। রাতের বেলা সবার অলক্ষ্যে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উপস্থিত ডাক্তারদের কোন চিকিত্সায় নেননি তিনি। অবশেষে রাত ১ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের মৃত সোনাউল্লাহ’র স্ত্রী বাদলি বেগম (৭২)। বছর ত্রিশেক আগে স্বামীর মৃত্যুর পর দরিদ্র পরিবারের এই গৃহবধূ দুই ছেলেকে নিজ পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থে বড় করেছেন। দুটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা উপার্জন করা শিখলেও মায়ের পরিশ্রম কমেনি। নিজের নামে থাকা সম্পত্তি সন্তানদের লিখে দিয়েছেন। অথচ অন্যের বাড়িতে কাজ করেই নিজের খাবার যোগাড় করতে হয়েছে নিয়মিত। তা থেকে ভাগ দিয়েছেন সন্তানদেরও। কিন্তু তারপরও নিগ্রহের সীমা ছিল না তার।

প্রতিবেশির জানায়, প্রায় প্রতিদিনই কোন না কথার সূত্র ধরে সন্তান দেলোয়ার এবং তার স্ত্রী বৃদ্ধ বাদলি বেগমের উপর অত্যাচার চালাতো। সেই অভিমানে গত তিনদিন ধরেই তিনি না খেয়ে নিজের শরীরকে কষ্ট দিয়েছেন। আর এ জন্যেও বৃহস্পতিবার রাতে তার উপর অত্যাচার করা হয়। যে কারণে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তামাকের গুড়া খেয়ে বৃদ্ধ বাদলি বেগম আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

মহম্মদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবু হাসান বলেন, পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে লবন পানি দিয়ে ওয়াশ করানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই তিনি সেটি করতে দেননি। শত চেষ্টাতেও সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে অন্য চিকিৎসা দেয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

যাদের সুখের জন্যে বৃদ্ধ বয়সেও পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করতেন সেই সন্তানদের নির্যাতনের শিকার সত্তোরোর্ধ বাদলি বেগম কষ্টে অভিমানে আত্মহত্যা করলেও তার পাশে দাঁড়ানোর মানুষ পাওয়া যায়নি। দাঁড়ায়নি পুলিশ প্রশাসনও। নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন আইনানুগ ব্যবস্থা।

বৃদ্ধ বাদলি বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক বিশ্বাস বলেন, তার আত্মহত্যার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া এ বিষয়ে নিকটজনদের কারো কোন আপত্তি না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে লাশ দাফনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology